পর্যটননগরী কক্সবাজারের অন্যতম পর্যটন স্পট লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্র সৈকত আর সৈকতের চেয়ারে বসে বিকেলের সূর্যাস্ত দর্শন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর ক্ষানেকটা নিজেদের একান্ত শ্রেষ্ঠ মুহুর্তগুলোকে উপভোগ করতেই সৈকতের পাড়ে জড়ো হয় সারাদেশ থেকে আগত পর্যটকেরা। কিন্তু স্থানীয় ফেরিওয়ালাদের বিরক্তিতে দিনদিন পর্যটন বিমুখ হয়ে উঠছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
পর্যটক কিংবা স্থানীয় কোনো দর্শনার্থী ৩০টাকা ভাড়ায় একটি চেয়ারে তার স্বস্তির সময় কাটাতে বসলেই প্রতি দুই মিনিট অন্তর অন্তর কিছু হকার ঝুঁড়ি হাতে চা,সিগারেট,বাদাম,ঝালমুড়ি, ঝিনুকসহ নানা ডাকে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য জোর করতে দেখা যায়।
রাজশাহী থেকে আগত নবদম্পতি মিনহাজ ও শিরিন তাদের বিয়ের পর প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার ঘুরতে এসে একঘন্টার জন্য সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চেয়ার ভাড়া করে নেয়। চেয়ারে বসার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ৯ জন ঝাঁলমুড়ি,বাদাম,ঝিনুক, আমড়াসহ বিভিন্ন বিক্রেতা আসে। সবাইকে এক এক করে উত্তর দিতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে অবশেষে ২০মিনিটের মাথায় চেয়ার ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন বলে জানান তারা।
তাছাড়া যতক্ষণ না পর্যন্ত এরা দর্শনার্থীদের কোনো পন্য বিক্রি করতে পারে ততক্ষণ নানা কথাবার্তার মাধ্যমে জোর করতে থাকে এসব ফেরিওয়ালারা।হকারদের এমন চর্চা রীতিমতো সৈকতে আগত পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের বিব্রত করে। পাশাপাশি সেসকল খাবার ও পণ্যের উচ্ছিষ্ট সৈকতকে দুষিত এবং সৌন্দর্য হানী করে বলে জানান পর্যটন সংস্লিষ্টরা।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কক্সবাজার (টুয়াক) এর সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা জানান, “সৈকতে পর্যকদের বিরক্তকারী হকার,টোকাইয়ের বিচরণ,মাথা ম্যাসেজ করার নাম দিয়ে পর্যকদের সর্বস্ব নিয়ে যাওয়া সহ সকল অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দায় নিতে হবে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও ট্যুরিষ্ট পুলিশকেই। এসব বন্ধ না হবার পেছনে তাদের যথেষ্ট তদারকির গাফিলতি অবশ্যই রয়েছে।"
তিনি আরো জানান, “বিচের প্রতিটি চেয়ারের মধ্যকার ১০ ফুট দুরূত্ব থাকতে হবে। এখন যেভাবে গাদাগাদিভাবে চেয়ার বসানো হয়েছে এতে করে চেয়ারে বসা দর্শনার্থী ও পর্যটকদের প্রাইভেসিকে নষ্ট করে।"
এব্যাপারে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, “পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের নানা দেশের উন্নত বিচগুলোর বেষ্ট প্র্যাক্টিসসমূহকে অনুসরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সৈকতে গোসলের পর পর্যটকদের যথাযথ চেঞ্জিং রুমের ব্যবস্থা,সৈকতকে পরিচ্ছন্ন প্লাষ্টিকমুক্ত রাখা,নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও পর্যটকরা যাতে কোনো বিরক্তিবোধ না করে সেই বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।"
পর্যকদের এসব বিরক্তি রোধ করতে সৈকতকে হকারমুক্ত করার জন্য ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সম্বন্বয়ে কাজ করবার কথা জানান ট্যুরিষ্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ ও পর্যটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তানভির হোসেন।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিছু অশৃঙ্খল কিশোর যাদের অধিকাংশই সৈকতে হকার ব্যবসার পাশাপাশি ভিক্ষা ও ছিনতাই কাজে জড়িত। পর্যটকদের বিরক্তির থেকে পরিত্রাণ চেয়ে প্রশাসনকে আরো তৎপর হওয়া উচিত মনে করছেন সচেতনমহল।