মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) ‘অবৈধ ও ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, এই আদালত আমেরিকা ও তাদের মিত্র দেশ ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যারা মার্কিন নাগরিক বা তাদের মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তে সহায়তা করবেন, তারা ও তাদের পরিবার এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। এই পদক্ষেপ এমন সময় নেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে রয়েছেন।
আইসিসির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্ষোভের মূল কারণ হলো, গত বছরের নভেম্বরে আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। ইসরায়েল ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আইসিসি ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছে। ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ফেল্ডকাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, ‘অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে আইসিসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইসিসি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ‘লজ্জাজনক নৈতিক সমতাভিত্তিক তুলনা’ করেছে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, আইসিসির পদক্ষেপ মার্কিন নাগরিকদের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে।
আইসিসি ও মার্কিন প্রশাসন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয় এবং আদালতের কোনো রায় স্বীকার করে না। ট্রাম্প প্রশাসনের আগেও ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ তদন্তের কারণে আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরে বাতিল করেন।
গত মাসে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে ভোট দিলেও সিনেটে বিলটি আটকে যায়।
গাজা প্রসঙ্গে ট্রাম্পের পরিকল্পনা
ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের আগে নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এতে গাজাকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেখানে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে আরব নেতারা ও জাতিসংঘ।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পুনরায় এই পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। তবে এতে গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, এই স্থানান্তর ‘অস্থায়ী’ হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, গাজাবাসীরা ‘অস্থায়ীভাবে’ অন্যত্র থাকবে, যতদিন না অঞ্চলটি পুনর্গঠিত হয়।
নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘অসাধারণ’ বলে প্রশংসা করেছেন। তবে এর বিরোধিতা করছে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা।