বর্তমান সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেছেন, এক সময় বিজ্ঞানের দিকে কোনো নজর ছিল না, বিজ্ঞান পড়ার শখ ছিল না। সবাই শুধু জিজ্ঞেস করলে কি পড়ছো বিবিএ, কি পড়বে এমবিএ। আমি একবোরেই বিবিএ-এমবিএকে মন্দ বলছি না।
২৩ জুলাই, রবিবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও আইটেসারেক্টেরর উদ্যোগে ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের আহবায়ক ও প্রধান উপদেষ্ঠা প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জগতের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতেই হবে। সব রকমেরই মানুুষ লাগবে। সেটা না হলে এই বিজ্ঞান প্রযুক্তির জগৎটা কিভাবে চলবে? আমদের একটা জায়গায় গিয়ে থমকে যেতে হবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদিও বিজ্ঞান চর্চা ছিল, বিজ্ঞান পড়ানো হতো। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিশেষভাবে বিজ্ঞানে উৎসাহী হয় সে জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিলেন। তখন থেকে তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে মনোনিবেশ করলেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার অধীনে সরকার গঠন হল, তখন আবার শিক্ষার দিকে আবার নজর দেওয়া হলো। আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা ভিন্ন ধারায় চললাম। ৯৬ থেকে ২০০০ পর্যন্ত যে সরকার ছিল তখন সাবমেরিনের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। পরবর্তীতে তারা ভাবল এর মাধ্যমে সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। কি তথ্য ছিল আর কি পাচার হবে সে জন্য দেশের মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত করা হল এবং আমরা অনেকদিন পিছিয়ে পড়লাম।
ডা. দীপু মনি বলেন, ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল শোষণ করার জন্য। যেন তাদের তোষামদ করবে, তাদের চহিদাগুলো পূরণ করবে সেরকম একটি শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। তার আগেও কি এ ভূখন্ডে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না? আমাদের এ ভূখন্ডে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ জ্ঞান অর্জন করেছে, দক্ষ হয়েছে সংগ্রাম করেছে।
ওয়ারি বটেশ্বরের প্রত্নতত্বের নিদের্শনের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এ নগরীতে আড়াই হাজার বছর আগে একটি সু-পরিকল্পিত নগর জীবনযাপন করেছি। তাই যদি হয়, তাহলে যে জাতি আড়াই হাজার বছর আগে সু-পরিকল্পতি নগর জীবন যাবন করছে সেহেতুে এখানে জ্ঞান বিজ্ঞানের একটি বড় চর্চা ছিল। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, মহস্থানগড়, বৌদ্ধ বিহারগুলোতো জ্ঞান চর্চার স্থান ছিল। এছাড়া পুরনো বড় মাদ্রাসাগুলোতেও জ্ঞান চর্চা হত।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের নতুন স্বপ্ন হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের ৪টি স্তম্ভের কথা বলেছেন-স্মার্ট নাগরিক হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। এসবগুলো আসলে করবে স্মার্ট নাগরিক।
তিনি বলেন, স্মার্ট নাগরিক হতে হলে আগে শিক্ষাটাকে স্মার্ট হতে হবে। সেই শিক্ষাটাকে স্মার্ট হতে হলে এবং জাতির পিতা যে স্বাধীন দেশের শিক্ষার কথা বলেছিলেন সেটা যদি করতে হয় তাহলে আমাদের ২০০ বছরের উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে চলবে না। সেজন্যেই আমরা শিক্ষার একটা রূপান্তর ঘটাবো। এমনকি সারা পৃথিবীতেই রূপান্তরের কথা বলা হচ্ছে। সেজন্য আমরা আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম গ্রহণ করেছি।
প্রসঙ্গত, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, শিল্পকলা এবং গণিত (STEAM)-এ শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য এই অনুষ্ঠানে সারা বাংলাদেশের ছয়টি স্তরের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে।