• ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক


Dec 7, 2020
18:32:34

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় রাজি না ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাঁচ বড় বিশ্ববিদ্যালয় রাজি না হলেও তারা পরে কোনো সময় এ পদ্ধতিতে আসতে পারে- এমন পথ খোলা রেখেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি লাঘবে বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৮টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। গত মার্চেই চারটির মধ্যে তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি বুয়েট যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এ ছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ টেক্সটাইল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। কিন্তু এখনও উল্টোপথেই আছে দেশের প্রাচীন চার বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে শতাধিক মেডিকেল কলেজে একটিমাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের এক কলেজ থেকে আরেকটিতে দৌড়াতে হয় না।

ফলে বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। ভোগান্তি আর হয়রানি থেকেও মুক্ত ভর্তিচ্ছুরা। এভাবে ঝক্কিমুক্ত করতে সরকার প্রায় একযুগ ধরে গুচ্ছবদ্ধ বা অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে গত বছর ৭টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটিমাত্র পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এ অবস্থায় চলতি বছর সরকার ফের একইভাবে গুচ্ছবদ্ধ ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও বেশিরভাগই এগিয়ে এসেছে।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখনও আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে অনড়। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যও প্রকাশ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর যুগান্তরকে জানান, দেশে ৪৯টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটির কার্যক্রম শুরু হয়নি আর কয়েকটি স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে না। এ ছাড়া কলেজ পর্যায়ে পাঠদান এবং দূরশিক্ষণ পরিচালনা করছে দুটি। সেই হিসেবে মোট ৩৯টি ক্যাম্পাসভিত্তিক পাঠদান করে যেগুলো স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এর মধ্যে ৩৪টিই গুচ্ছবদ্ধ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে একমত পোষণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছবদ্ধ ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে গত ১ ডিসেম্বর ইউজিসির মধ্যস্থতায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই মূলত ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুচ্ছে পরীক্ষা নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। এই গুচ্ছে নাম দেয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) বিশ্ববিদ্যালয়।

 

এ বছর এই গ্রুপের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ব্যাপারে কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি সোমবার রাতে যুগান্তরকে জানান, ‘আগামী ১৯ ডিসেম্বর আমাদের গুচ্ছের বৈঠক আছে। সেদিন সব ভিসি স্যারের মতামতের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, জনগণের অর্থে পরিচালিত হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তাই জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি চলছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট লাঘবে গুচ্ছবদ্ধ পরীক্ষা নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সব বিশ্ববিদ্যালয়ই সংসদে পাস হওয়া আইনের বলে চলছে। একটি যদি গুচ্ছবদ্ধ হতে পারে, তাহলে আরেকটির গুচ্ছের অধীন পরীক্ষা নিতে না পারার কোনো বাধা দেখছি না।

গত ২৮ নভেম্বর ইউজিসিকে চিঠি দিয়ে গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগ্রহ দেখায় বুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরে অন্য তিন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েটেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়। তাতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে প্রাথমিক পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ আছে। তবে বিপত্তি ঘটেছে অন্যত্র। সেটি হচ্ছে, পরীক্ষাটি সব সময়ই বুয়েটের নেতৃত্বে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এতে আপত্তি আছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করে উল্লিখিত তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির ভিসি যুগান্তরকে বলেন, জিএসটি গ্রুপে পর্যায়ক্রমে কমিটির সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভিসিদের মূল সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদেও পর্যায়ক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখানে প্রস্তাব পর্যায়ে বুয়েটে নেতৃত্ব রাখার উদ্দেশ্য সংশয়পূর্ণ। বাকিরা এই শর্ত মেনে বুয়েটের সঙ্গে যুক্ত হবে কি না, জানি না। তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এটা মেনে নেবেন বলে মনে হচ্ছে না। সামনে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আছে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

ইউজিসিতে বুয়েটের পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করবে বুয়েট। দুটি ধাপে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রথম ধাপে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে। যেহেতু এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি, তাই এ ব্যবস্থা। প্রিলিমিনারিতে পাস করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরের ধাপে শুধু বুয়েট ক্যাম্পাসে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।

এ পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীদের ফলা অনুসারে এ চার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। প্রস্তাবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ব্যাপারে ১১টি আর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে ৯টি দিক উল্লেখ করা হয়েছে। বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন জানান, একাডেমিক কাউন্সিলে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বুয়েটের চিঠি আমরা পেয়েছি।

আগামী ১৩ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আছে। সেখানে বুয়েটের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। কাউন্সিলর একমত হলে বুয়েটের সঙ্গে গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আমরা যাব। তবে এটা ঠিক যে, বুয়েট না এলেও আমরা অপর তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাব বলে গত মার্চে একমত হয়েছি। সেই সিদ্ধান্ত থেকে আমরা এখনও বেরিয়ে আসিনি।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গুচ্ছবদ্ধ ভর্তি পরীক্ষায় এখনও দুটি বিপত্তি আছে। একটি হচ্ছে, বিশেষায়িত বাংলাদেশ টেক্সটাইল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে আছে।

তারা অন্য চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গুচ্ছবদ্ধ হতে চায়। এই বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে জনগণের উপকার হবে। আরেকটি হচ্ছে, স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা আশা করছি, তারা চ্যান্সেলরের প্রত্যাশা, শিক্ষামন্ত্রীর আগ্রহ এবং সর্বোপরি জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করবে। বিশেষ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসও আলাদা পরীক্ষা নেয়ার কথা ইউজিসিকে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে।

১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় : নতুন গুচ্ছ এসব প্রতিষ্ঠান হল : ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।