• ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক


Feb 4, 2024
15:33:40

এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (XR) প্রযুক্তি: ভবিষ্যতের প্রযুক্তি

এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (XR) হল এমন একটি প্রযুক্তি যা বাস্তব জগতের সাথে ভার্চুয়াল জগতকে মিশিয়ে দেয়। এই প্রযুক্তি একটি কম্পিউটার ভিজুয়ালাইজেশন পদ্বতি যা ব্যবহারকারীকে বাস্তব জগতের সাথে মিথস্ক্রিয়া তৈরী করতে দেয়। এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), মিক্সড রিয়েলিটি (MR), এবং লাইভ অ্যানিমেশন সহ একটি প্রযুক্তিগত পদ্ধতি বিস্তৃত পরিসরে অন্তর্ভুক্ত হয়। VR হল একটি সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল জগতের অভিজ্ঞতা। VR হেডসেট ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা একটি ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারে যেখানে তারা বাস্তব জগতের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারে না। AR হল একটি প্রযুক্তি যা বাস্তব জগতের সাথে ভার্চুয়াল উপাদান যোগ করে। AR হেডসেট বা স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জগতের উপর ভার্চুয়াল উপাদান দেখতে পারে। VR, MR এবং AR এর সমন্বয়ে তৈরী এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি একটি উদীয়মান প্রযুক্তি, তবে এর সম্ভাবনা অনেক। XR প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করবে বলে বিজ্ঞানী, প্রযুক্তি গবেষকবৃন্দ এবং প্রযুক্তিভিত্তিক বিনিয়োগকারীগন আশা প্রকাশ করেছেন। XR প্রযুক্তি বেশ কয়েকটি খাতে বেশ বড় ধরনের বৈপ্লবিক  সুবিধা আনয়ন করবে।  XR এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জগতের সাথে সম্পর্কিত ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারে এবং সেই জগতে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং তাদের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। XR এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভার্চুয়াল জগত ব্যবহার করতে পারে। এটি চিকিৎসকদের রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। XR এর মাধ্যমে গেম খেলোয়াড়রা বাস্তব জগতের সাথে সম্পর্কিত ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারে এবং সেই জগতে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এটি গেম খেলোয়াড়দের গেম খেলার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে এবং তাদের গেমিং অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে। XR এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবাগুলিকে ভার্চুয়াল জগতে প্রদর্শন করতে পারবে। এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপণন কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করে তুলবে। এই প্রযুক্তি এখনও উন্নয়নাধীন, এবং এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভিআর ডিভাইসগুলি বেশ ভারী এবং ব্যয়বহুল। এআর এবং এমআর ডিভাইসগুলি কিছুটা কম ভারী এবং ব্যয়বহুল, তবে সেগুলি এখনও নিখুঁত নয়। এগুলি প্রায়শই ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে সমস্যায় পড়ে। XR প্রযুক্তি কিছু ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভিআর ব্যবহারকারীদের মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং অন্যান্য অস্বস্তির অনুভূতি অনুভব হয়েছে। এছাড়াও XR প্রযুক্তির সামাজিক এবং নৈতিক প্রভাব সম্পর্কে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। কিছু ব্যবহারকারী XR প্রযুক্তি ডিভাইস আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং এমনকি সহিংসতা বা বিভ্রান্তিমূলক আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে বলে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। XR ডিভাইসগুলি ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করতে এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হলে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যাঘাত ঘটবে। এই চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও, XR প্রযুক্তিতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলি কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত গবেষণা এবং প্রাযুক্তিক উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে। ব্যবহারকারীকে আরো ভালো অভিজ্ঞতা দিতে উন্নতমানের ডিভাইস এবং সফ্টওয়্যার ডিজাইন করতে হবে। এছাড়া সামাজিক এবং নৈতিক প্রভাবগুলি বোঝার জন্য সামাজিক গবেষণা পরিচালনা করে মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা ঝুঁকিগুলি কমাতে প্রযুক্তিগত এবং নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে, আমরা XR প্রযুক্তির সম্ভাব্য সুবিধাগুলিকে কাজে লাগাতে এবং এর সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারি।



---


জেমাম আহমদ

সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও তথ্য প্রযুক্তি গবেষক